রাজধানীর ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় ঢাকার ৪ নদী দখল-দূষণ মূক্ত করার দাবি।

পানির গুরুত্ব এবং এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে প্রতিবছর ২২ মার্চ ইউএন-ওয়াটারের আহŸানে পালিত হয় বিশ্ব পানি দিবস। এবারের পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘ ভূগর্ভস্থ পানি, অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করা’।  ভূগর্ভস্থ পানি দৃশ্যমান নয় বলে পানির উৎস বলতে মানুষ সাধারণত নদ-নদী, পুকুর এবং জলাশয়ের পানিকে বোঝে। কৃষি, সুপেয় পানি ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে  ভূগর্ভস্থ পানির ওপর আমাদের নির্ভরতা অনেক। অথচ  ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণে আমরা উদাসীন।  ভূগর্ভস্থ পানি একটি গুপ্ত ধন যা আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে। ঢাকায় ব্যবহারের উপযোগী পানির মূল উৎস ভূগর্ভস্থ পানি। মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে  ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর ঢাকায় পানির স্তর প্রায় ১ মিটার থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের চার পাশের নদ-নদীর পানি অধিক দূষিত হওয়ার কারনে পরিশোধন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নদ-নদীর দ‚ষিত পানি বছরের পর বছর ভূগর্ভে প্রবেশ করলে তা একটা সময় ভূগর্ভস্থ পানিকেও দুষিত করে ফেলবে। ভূ-উপরিস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো ছাড়া  ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষিত করা সম্ভব হবে না বলে মনে করা হয়।
এমতবস্তায় আজ ২১ মার্চ সোমবার সকাল ১০:০০ টায় পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ এর উদ্যোগে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে গাজীর ঘাটে বিশ্ব পানি দিবস ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্দনে বক্তারা উক্ত দাবি জানান।

পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ এর সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের সাধারন সম্পাদক জি.এম রোস্তম খান, পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা)র সহ-সম্পাদক, মোঃ সেলিম, নিরাপদ চিকিৎসা চাই (নিচিচা)র মহাসচিব, উম্মে সালমা, বনলতা নারী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি, ইশরাত জাহান লতা, আমরা দূর্বার এর সভাপতি আব্দুস সালাম সময়, সচেতন নগরবাসী সংগঠনের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, ওল্ড ঢাকা কমিউনিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল্লাহ, রাজপুর মানব কল্যান সংস্থার আরিফুল ইসলাম, নিচিচার সাংগঠনিক সম্পাদক রাজি উদ্দিন প্রমূখ।

বক্তারা বলেন, দেশের প্রধান শহর ও শিল্প এলাকাগুলো সুপেয় পানির সুবিধা নিতে মূলত নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। কিন্তু যে নদী এসব শহর আর শিল্পকে জীবন দিয়েছে, সেখানকার পানি এখন বিষাক্ত হয়ে মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে। দেশের বর্জ্যের ভাগাড় হিসেবে ব্যবহৃত হতে হতে এসব নদী এখন বিষাক্ত হয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার পরিবেষ্টিত নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষার শত চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। রাজধানীর কোলঘেঁষা এসব নদী দখল এবং দূষণের ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতে শুরু করেছে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগব্যাধিতে।দূষিত হতে হতে পানি তার স্বাভাবিক ঘনত্বটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। আমাদের নদীগুলো এখন বর্জ্য ফেলার ভাগাড়। পলিথিন, ট্যানারিসহ শিল্পকারখানা ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিষাক্ত বর্জ্যে ভরপুর নদীর পানি। শুধু তাই নয়, এসব বিষাক্ত পানি নদীর সীমা ছাড়িয়ে প্রবেশ করছে ভূগর্ভে। আর এগুলো ভূগর্ভে প্রবেশ করায় তা জনস্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে গুরুতর সমস্যা তৈরি করবে। ভূগর্ভে একবার বিষাক্ত পানি প্রবেশ করলে তা পরিশোধন করা খুবই কঠিন। তাই সরকারের উচিত, নদীগুলোকে দ্রুত দূষণমুক্ত করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।  

বক্তারা আরো বলেন, পানির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সামনের দিন খুবই কঠিন হবে। সুপেয় পানির আধার ভ‚গর্ভস্থ পানির অপব্যবহার রোধ করা এখন জরুরি। দেশে দ্রুত শিল্পায়ন, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কৃষিকাজে ব্যবহারে  ভূগর্ভস্থ পানির অবাধ ব্যবহার এখন কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।  ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষন, মাটির উপরিভাগের পানি অর্থাৎ নদী, জলাশয় ও পুকুরের পানি ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। বিশেষ করে নদী ব্যবস্থাপনার (নদী খননের মাধ্যমে সারা বছর পানি ধরে রাখা) ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে।

Tag :

আপনার মুল্যবান কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল সংরক্ষণ করুন এবং অন্যান্য তথ্য দিন

জনপ্রিয় পোস্ট
https://www.youtube.com/watch?v=wRt0Eo1voJ4

শহিদ শেখ রাসেলের সমাধিতে কৃষি তথ্য সার্ভিসের শ্রদ্ধা নিবেদন

রাজধানীর ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় ঢাকার ৪ নদী দখল-দূষণ মূক্ত করার দাবি।

সময় : ০৭:৫৫:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ মে ২০২২

পানির গুরুত্ব এবং এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে প্রতিবছর ২২ মার্চ ইউএন-ওয়াটারের আহŸানে পালিত হয় বিশ্ব পানি দিবস। এবারের পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘ ভূগর্ভস্থ পানি, অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করা’।  ভূগর্ভস্থ পানি দৃশ্যমান নয় বলে পানির উৎস বলতে মানুষ সাধারণত নদ-নদী, পুকুর এবং জলাশয়ের পানিকে বোঝে। কৃষি, সুপেয় পানি ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে  ভূগর্ভস্থ পানির ওপর আমাদের নির্ভরতা অনেক। অথচ  ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণে আমরা উদাসীন।  ভূগর্ভস্থ পানি একটি গুপ্ত ধন যা আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে। ঢাকায় ব্যবহারের উপযোগী পানির মূল উৎস ভূগর্ভস্থ পানি। মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে  ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর ঢাকায় পানির স্তর প্রায় ১ মিটার থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের চার পাশের নদ-নদীর পানি অধিক দূষিত হওয়ার কারনে পরিশোধন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নদ-নদীর দ‚ষিত পানি বছরের পর বছর ভূগর্ভে প্রবেশ করলে তা একটা সময় ভূগর্ভস্থ পানিকেও দুষিত করে ফেলবে। ভূ-উপরিস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো ছাড়া  ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষিত করা সম্ভব হবে না বলে মনে করা হয়।
এমতবস্তায় আজ ২১ মার্চ সোমবার সকাল ১০:০০ টায় পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ এর উদ্যোগে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে গাজীর ঘাটে বিশ্ব পানি দিবস ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্দনে বক্তারা উক্ত দাবি জানান।

পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ এর সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের সাধারন সম্পাদক জি.এম রোস্তম খান, পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা)র সহ-সম্পাদক, মোঃ সেলিম, নিরাপদ চিকিৎসা চাই (নিচিচা)র মহাসচিব, উম্মে সালমা, বনলতা নারী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি, ইশরাত জাহান লতা, আমরা দূর্বার এর সভাপতি আব্দুস সালাম সময়, সচেতন নগরবাসী সংগঠনের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, ওল্ড ঢাকা কমিউনিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল্লাহ, রাজপুর মানব কল্যান সংস্থার আরিফুল ইসলাম, নিচিচার সাংগঠনিক সম্পাদক রাজি উদ্দিন প্রমূখ।

বক্তারা বলেন, দেশের প্রধান শহর ও শিল্প এলাকাগুলো সুপেয় পানির সুবিধা নিতে মূলত নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। কিন্তু যে নদী এসব শহর আর শিল্পকে জীবন দিয়েছে, সেখানকার পানি এখন বিষাক্ত হয়ে মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে। দেশের বর্জ্যের ভাগাড় হিসেবে ব্যবহৃত হতে হতে এসব নদী এখন বিষাক্ত হয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার পরিবেষ্টিত নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষার শত চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। রাজধানীর কোলঘেঁষা এসব নদী দখল এবং দূষণের ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতে শুরু করেছে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগব্যাধিতে।দূষিত হতে হতে পানি তার স্বাভাবিক ঘনত্বটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। আমাদের নদীগুলো এখন বর্জ্য ফেলার ভাগাড়। পলিথিন, ট্যানারিসহ শিল্পকারখানা ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিষাক্ত বর্জ্যে ভরপুর নদীর পানি। শুধু তাই নয়, এসব বিষাক্ত পানি নদীর সীমা ছাড়িয়ে প্রবেশ করছে ভূগর্ভে। আর এগুলো ভূগর্ভে প্রবেশ করায় তা জনস্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে গুরুতর সমস্যা তৈরি করবে। ভূগর্ভে একবার বিষাক্ত পানি প্রবেশ করলে তা পরিশোধন করা খুবই কঠিন। তাই সরকারের উচিত, নদীগুলোকে দ্রুত দূষণমুক্ত করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।  

বক্তারা আরো বলেন, পানির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সামনের দিন খুবই কঠিন হবে। সুপেয় পানির আধার ভ‚গর্ভস্থ পানির অপব্যবহার রোধ করা এখন জরুরি। দেশে দ্রুত শিল্পায়ন, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কৃষিকাজে ব্যবহারে  ভূগর্ভস্থ পানির অবাধ ব্যবহার এখন কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।  ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষন, মাটির উপরিভাগের পানি অর্থাৎ নদী, জলাশয় ও পুকুরের পানি ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। বিশেষ করে নদী ব্যবস্থাপনার (নদী খননের মাধ্যমে সারা বছর পানি ধরে রাখা) ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে।